Travel the world

Climb the mountains

Post Page Advertisement [Top]

ঘাটাল সিংহবাহিনী মন্দির 



ত্রয়োদশ শতকের পর একপ্রকার বাংলার ধর্মীয় স্থাপত্য চর্চা পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার প্রায় ২০০ বছর পর পঞ্চাশ শতকে বাংলার ধর্মীয় স্থাপত্য চর্চা যেন আবার মাথা চারা দিয়ে ওঠে।প্রথমদিকে সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলায় নতুন করে শুরু হয় মমসজিদ চর্চা | গাঙ্গেয় বাংলায় উদ্ভব অনেক নতুন মসজিদ শিল্পের রীতি। সেই সময় মূলত ভূস্বামী ও বিত্তশালী বনিক পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয় বাংলায় মন্দির স্থাপত্য ও উদ্ভব হয় চালা প্রথা।
যেমন- দো- চালা, চার চালা ও বারো চালা রীতি।

সাধারণত লক্ষ করা যায় মন্দির ও মসজিদ উভয়ের স্থাপত্য সমানভাবে অগ্রসর হতে থাকে।
হাওড়া থেকে খড়গপুর, মেদিনীপুর বা পাঁশকুড়া লোকালে পাঁশকুড়া স্টেশনে নেমে ঘাটাল বাসে করে ১ ঘন্টার মধ্যে ঘাটাল আসা যায়। ঘাটাল সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে ঘাটাল পোষ্ট অফিসের কাছেই কামার পাড়া সিংহবাহিনী মাতার মন্দির |
2020 সালের সংস্কারের পরে
2020 সালে সংস্কারের পরে

2020 সালে সংস্কারের পূর্বে

সেই সময় কর্মকার পরিবারের পেশা ছিল লোহা লক্কর নিয়ে কিন্তু ধীরে ধীরে শিলাবতী নদীর উর্বর তীর রেশম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ হতে থাকে। কর্মকার পরিবারের সদস্য হরিহর কর্মকার তখন লোহার কাজ ছেড়ে রেশম চাষে নেমে পড়েন ও প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তখনকার গোঁড়া সমাজ ব্যবস্থার জন্য হরিহরবাবু সমাজে ধনী হলেও সম্মান অর্জন করতে পারছিলেন না। তখনকার দিনে দূর্গা পূজার অধিকার ছিল শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ

ও জমিদার পরিবারের। তাই মন্দিরের শিলালিপি অনুযায়ী ১৪১২ শকাব্দের বা ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দের জৈষ্ঠ্য মাসে হরিহরবাবু এই চার- চালা রীতির এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।







সেইথেকে অষ্টধাতুর চতুভূজা দেবীদূর্গা
মহাআরম্বরে এইখানে পূজিত হয়ে আসছেন | হরিহরবাবু উচ্চ নীচ নির্বিশেষে সমস্ত জাতির জন্য মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত করে করে দেন। সেই সময় মন্দিরের চারিপাশ প্রাচীর দ্বারা ঘেরা ছিল

প্রায় পাঁচশো ত্রিশ বছরের পুরনো অভিজাত এই দুর্গা পুজোতে ষষ্ঠীর দিন ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে দেবীর বোধন হয়।


এই বিশেষ পুজোয় দেবীর সাথে থাকে লক্ষীনারায়ন ও গোপাল থাকেনা কার্তিক গণেশ তাই এই বনেদি পুজোতে থাকেনা কলা বউও | এরপর সপ্তমীতে দেবীকে গঙ্গা জলে স্নান করিয়ে নতুন বেশ-ভূষা ও অলংকার পরিয়ে অলংকৃত করা হয় এরপর চারদিন ধরে চলতে থাকে দেবীর আরাধনা আর তার সাথে দুটি নেড়ির তেলের প্রদীপ জ্বলে থাকে দিবারাত্র | একটি জালানো হয় সপ্তমীতে আর একটি জালানো হয় অষ্টমীতে |
অষ্টমীতে হয় পুষ্পাঞ্জলি ও গণ্ডি কাটা এরপরে সন্ধি লগ্নের ঠিক আগের মুহূর্তে বনেদি বাড়ির বন্দুক থেকে ছোঁড়া হত এক রাউন্ড গুলি | যদিও বয়সের ভারে সে বন্দুক আজ নেই, তাই বোমা

ফাটিয়ে প্রাচীন রীতি অনুযায়ী ১০৮ টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হয় দেবীর সন্ধিপুজো, এরপর নবমীতে মা চলে যান পাশের চন্ডী মন্দিরে সেখানেই হয় বলিদান | শোনা যায় আগে এখানে মহিষ বলিদান হত এখন ছাগল, আঁখ, ছাঁচি কুমড়ো, কাঁঠালি কলা বলিদান হয়। এই মন্দিরটি এমনিতে সারা বছর ফাঁকাই থাকে |

বলিদানের পর মাকে নিয়ে আসা হয় মূল মন্দিরের সামনে চার-চালা জগমোহনে সেখানে মাকে আবার স্নান করিয়ে নতুন সাজে সজ্জিত করে সিংহাসনে আরোহণ করেন |
প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী এখানে এখনো একশো কুড়ি কেজি আতপ চালের নৈবেদ্য করা হয় ও নবমীর শেষে সবাই মায়ের কাছে পুজোর ভুলভ্রান্তি ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং একাদশীর দিন নরনারায়ন সেবার মাধ্যমে পুজোর সমাপ্তি হয়।
একসময় নাকি বিদ্যাসাগর মহাশয় সপরিবারে এই ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে আসতেন। বিখ্যাত ইংরেজ ব্যবসায়ী ওয়াটসন্ সাহেব এই পুজোয় প্রতিবছর নিয়মিত অর্ঘ্য পাঠাতেন।




১৭৯৫ সালে কর্মকার বংশের বংশধর জিতারাম কর্মকার এই মন্দির সংস্কার করেন ও

বর্ধমান রাজ প্রাসাদের অনুকরণে এই সিংহদুয়ার নির্মাণ করেন, তাতে বর্ধমান রাজা কীর্তিচন্দ্র মহাতাপ বেদম চটে গিয়ে জীতারাম কর্মকারকে আটক

করে আনেন।
কথিত আছে সেদিন রাতেই নাকি মহারাজ দেবীর স্বপ্নাদেশ পান জীতারাম কর্মকারকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তখন তিনি জীতারাম কর্মকারকে ছেড়ে দেন অনেক ভেঁট দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করেন এবং সে সেবায়েতদের জন্য অনেক দেবত্ব জমি দান করেন ও নিয়মিত খোঁজ রাখতেন মায়ের সেবায় যেন কোন রকম ত্রুটি না হয় |
শুধু দুর্গাপূজা নয় কামারপাড়ার সকল সদস্য পালা করে মায়ের নিত্য পূজা দেখাশোনা করেন । এমনকি প্রাচীন রীতি অনুযায়ী পাড়ার কোনো সদস্য এখনো শিঙি মাছ খান না| 

সরবেড়িয়া ঘাট

শুধু এই মন্দিরটি নয় প্রাচীন শহর ঘাটালের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্য ।কিছু লোকচক্ষুর সামনে আর কিছু আজও মুখ লুকিয়ে ঝকঝকে  শহরের আলোতে ।

তেমনই একটি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ঘাট ।ঘাটালে দেওয়ানী কোর্টের কাছে সরবেড়িয়া চৌধুরী পরিবারের তৈরি ঘাটের শিলালিপি এখনো বিদ্যমান।

 নবরত্ন মন্দির

মন্দিরের স্থাপত্যের যেমন চালা রীতি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল তেমনি ১৭০০ শতাব্দীর দিকে রত্ন প্রথাও খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে যেমন- এক রত্ন, পঞ্চরত্ন ও নবরত্ন ।




কর্মকার পাড়ার সিংহবাহিনী মন্দির ছেড়ে একটু ভেতরে এগোলেই চোখে পড়ে গোসাই পাড়ার ১৭৯৮ সালে তৈরি বৃন্দাবন চন্দ্রের নবরত্ন মন্দির, মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজে লঙ্কা যুদ্ধ, কৃষ্ণ লীলা ও সাহেবদের শিকারের দৃশ্য খোদাই করা আছে ।এই মন্দিরটি এখানের স্থানীয় গোস্বামী পরিবারের পূর্বপুরুষ কর্তৃক নির্মিত ।

No comments:

Post a Comment

If you have any question let me ask

Bottom Ad [Post Page]